শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
সর্বশেষ সংবাদঃ
শ্যামনগরে হাইকোর্টের নির্দেশনাকে অবজ্ঞা করে মানববন্ধন শ্যামনগর রাতের আঁধারে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন নূরনগরে দৃষ্টিপাত সম্পাদকের সহধর্মিনী আনোয়ারা বেগম স্মরণে কোরআন খতম ও দোয়া অনুষ্ঠিত শ্যামনগরের উপকূলীয় কালিন্চী গ্রামে চাঁদাবাজরা বেপরোয়া দৃষ্টিপাত সম্পাদকের সহধর্মিনী আনোয়ারা বেগম এর মৃত্যুতে শ্যামনগর দৃষ্টিপাত পরিবারের শোক উস্কানিমূলক কথার প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল কর্মী পিটিয়ে আহত করলেন দুই চিংড়িঘের কর্মচারীকে শ্যামনগরে র‍্যাবের অভিযানে ৪৭২৫ কেজি চিনি যুক্ত ভেজাল মধু উদ্ধার মামলা থেকে জামিন নিয়ে দুর্বৃত্তরা রাতের অন্ধকারে চিংড়ি ঘেরের বসতবাড়ী আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলো শ্যামনগরে মৎস্য প্রকল্পের গেট ভাংচুরসহ লুটপাটের অভিযোগ দুর্বৃত্তরা পরিবারের সবাই কে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল সাতক্ষীরাতে প্রদীপ্ত প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার আয়োজনে আলোচনা সভা এবং খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠান শ্যামনগরে খাসজমিতে ভূমিহীনদের অধিকার বিষয়ে সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে কর্মশালা সাংবাদিক সামিউল মনিরের আম্মার দাফন সম্পন্ন :পারিবারিক গোরস্থানে সমাহিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা স্মরণে শ্যামনগরে আলোচনা সভা ও প্রতিবাদ সমাবেশ সাতক্ষীরার শ্যামনগরে লায়ন্স ক্লাবের উদ্যোগে অসহায়দের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শ্যামনগরে তিন দিন ব্যাপী শিক্ষকদের জীবন দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ সমাপনী সাতক্ষীরাসহ দেশের ৬৩ জেলায় জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের মানববন্ধন কাশিমাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সম্পাদক আনিসুজ্জামান বাবলু আর নেই ১৫ ই আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিতঃ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ১৭ নীলডুমুর বিজিবি ব্যাটালিয়নের উদ্যোগে অসহায়-দুঃস্থদের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
Notice :
বিজ্ঞপ্তি : জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা সুন্দরবন নিউজ এর জন্য সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কিছু সংখ্যাক সংবাদকর্মী আবশ্যক। 01641-530024

সংবাদপত্র বিক্রি করেও মানুষের পাশে খুকি

প্রতিবেদকের নাম / ৯৭ সময়ঃ
নিউজ আপঃ বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২০, ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট : বিয়ের মাত্র মাসখানেকের মাথায় বিধবা হয়েছিলেন দিল আফরোজ খুকি। শহরের সবাই চেনেন খুকি নামেই। খবরের কাগজ বিক্রি করে একসময় প্রতিদিন ৩০০ টাকা আয় করতেন। যা থেকে নিজের জন্য ব্যয় করতেন মাত্র ৪০ টাকা।

আর ১০০ টাকা ব্যাংকে জমা করতেন হজে যাবেন বলে। বাকি ১৬০ টাকাই ব্যয় করতেন সমাজকল্যাণমূলক কাজে। এর মধ্যে ১০০ টাকা দিতেন এতিমখানায়, ৫০ টাকা দিতেন মসজিদ-মন্দিরে আর ১০ টাকা দিতেন ফকির মিসকিনকে। এত দিনে ব্যাংকে জমা হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। সেই জমানো অর্থ আর পৈতৃকভাবে পাওয়া কিছু সম্পত্তিই তার জীবনের শেষ সম্বল। যা দিয়ে যেতে চান কোনো স্কুলের নামে। সেই দানের টাকা থেকে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে বৃত্তি।আর ১০০ টাকা ব্যাংকে জমা করতেন হজে যাবেন বলে। বাকি ১৬০ টাকাই ব্যয় করতেন সমাজকল্যাণমূলক কাজে। এর মধ্যে ১০০ টাকা দিতেন এতিমখানায়, ৫০ টাকা দিতেন মসজিদ-মন্দিরে আর ১০ টাকা দিতেন ফকির মিসকিনকে। এত দিনে ব্যাংকে জমা হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। সেই জমানো অর্থ আর পৈতৃকভাবে পাওয়া কিছু সম্পত্তিই তার জীবনের শেষ সম্বল। যা দিয়ে যেতে চান কোনো স্কুলের নামে। সেই দানের টাকা থেকে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে বৃত্তি।

আর মৃত্যুর পর শায়িত হতে চান জন্ম শহর কুষ্টিয়ায়। বলছি রাজশাহী শহরের প্রায় ৪০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রির সঙ্গে জড়িত বিধবা খুকির কথা। মানসিক ভারসাম্যহীনতা আর নানা রোগব্যাধি বাসা বেঁধেছে শরীরে। ফলে আগের মতো চলতে পারেন না। এখন অসচ্ছলতা ঘিরে ধরেছে খুকিকে। পান না কোনো সরকারি সহায়তাও। বালিকা বয়সে বিধবা হয়ে হকারি করেও ছিলেন অনন্য সমাজসেবক। এখন দিন কাটছে নানা দুঃখ-কষ্টে।
জানা গেছে, প্রায় ৪০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রির সঙ্গে জড়িত খুকি। অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় মানুষ তাকে পাগলি বলেও ডাকত।

ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠেই ধীর পায়ে রাজশাহী রেলওয়ে মার্কেট হয়ে স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোর সার্কুলেশন অফিসে যাওয়া তার নিত্য রুটিন। সংবাদপত্র সংগ্রহ করে পায়ে হেঁটে তা বিভিন্ন বাড়ি ও মোড়ে বিক্রি করে বিকালে আবার বাড়িতে ফিরে আসেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একই রুটিন মেনে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি সমাজসেবার কাজ করা খুকি এখন অনেকটাই নিঃসঙ্গ আর দুর্বল। জীবনসায়াহ্নে এসে কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারেন না খুকি। তবে তার কোনো অপ্রাপ্তি বা আফসোস নেই বলে জানান খুকি। রাজশাহী শহরে তিনিই একমাত্র নারী পত্রিকা বিক্রেতা।
জানা গেছে, কিশোরী বয়সে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধের সঙ্গে খুকির বিয়ে হয়েছিল। মাস যেতে না যেতেই স্বামী মারা যান। ১৯৮০ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর পরিবার আত্মীয়-স্বজন তাকে গৃহ ছাড়া করেন। ভাইদের আপত্তিতে বাবার বাড়িতে তার জায়গা হয়নি। এরপর থেকেই কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। পাগলি বলে তাকে কেউ আশ্রয়ও দেন না। এমনকি অনেকে মারধরও করেন। তবুও কারও দয়ায় না চলে বেছে নেন সংবাদপত্র বিক্রির পেশা।

বড় কোনো সমস্যা তাকে কাবু করতে না পারলেও মাঝমধ্যে ছোটখাটো সমস্যাগুলো তাকে অসহায় করে দেয়। এর পরও কোনো লোভ-লালসা নেই খুকির। এক দিন মানিব্যাগ ফিরিয়ে দিয়ে মালিকের কাছ থেকে ১৫০ টাকা বখশিশ পান খুকি। পুরো রাজশাহীর মানুষকে সেদিন বলেছেন, ‘আমি সবার চেয়ে ধনী। ’ সেই অর্থকেই পত্রিকা ব্যবসার পুঁজি হিসেবে কাজে লাগান সংগ্রামী এই নারী। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে এলোমেলো আলাপে খুকি জানান, স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকসহ প্রতিদিন ৩০০ পত্রিকা তিনি বিক্রি করেন। এ থেকে প্রতিদিন তার আয় ৩০০ টাকা। এই টাকা থেকে নিজের খরচ মাত্র ৪০ টাকা। আগে জমানো টাকা থেকে আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দিলেও এখন আয় নেই। নিজেই চলছেন কষ্ট করে।

প্রতিদিন সকালে তার শিরোইল মহল্লার বাসা থেকে বের হয়ে হেঁটে রাজশাহী মহানগরীর রেলগেট মার্কেটে পত্রিকার এজেন্টদের কাছ থেকে পত্রিকা ক্রয় করেন। তারপর সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে রাজশাহীর রেলস্টেশন, শিরোইল বাস টার্মিনাল, সাগরপাড়া, আলুপট্টি, সাহেববাজার, আরডিএ মার্কেট ও নিউমার্কেটে পত্রিকা বিক্রি করেন। এসব স্থানে তার কিছু নিয়মিত কাস্টমার আছে তাদের কাছে পত্রিকা বিক্রি করেন আবার সড়কে চলাচল করা বা বাজারে কেনাবেচা করতে আসা মানুষদের কাছে নিয়ে গিয়েও পত্রিকা কিনতে অনুরোধ করেন। এদের মধ্যে অনেকে পত্রিকা নেন আবার অনেকে পত্রিকা নেন না। তবে পত্রিকা বিক্রির বিনিময়ে তিনি কখনো অতিরিক্ত কোনো টাকা-পয়সা নেন না। দিল আফরোজ বলেন, আগে বেশি পত্রিকা বিক্রি হতো। লোকজনের কাছে গেলে পত্রিকা নিত। এখন কম পত্রিকা বিক্রি হয়। লোকজন তেমন পত্রিকা কিনতে চায় না। ’ তারপরও আমৃত্যু এই পেশার সঙ্গে থেকেই জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চান তিনি। রাজশাহীর স্থানীয় পত্রিকার সার্কুলেশন ম্যানেজার লিটন ইসলাম বাবু জানান, ‘আমি ১৩ বছর ধরে খুকি আপাকে দেখছি আমার কাছ থেকে পত্রিকা নিতে। কখনো কোনো বকেয়া রাখেননি। আগে টাকা পরিশোধ করেন, তারপর পত্রিকা কিনেন। দুই তিন বছর আগেও সানশাইন পত্রিকা নিতেন ১০০ কপির মতো। এখন কখনো ৩০ কপি, কখনো ২০ কপি নেন। ’ আরেকটি দৈনিকের সার্কুলেশন ম্যানেজার হারুন জানান, টাকা-পয়সা পরিশোধ করেই তারপর পত্রিকা কিনেন খুকি। তার পত্রিকা আগে দেড়শো কপির মতো কিনলেও বর্তমানে ৩০ থেকে ৫০ কপির মতো কিনেন বলে জানান তিনি।

তবে খুকির পরিচিত আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা বলছেন, কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন এই নিঃসন্তান নারী। তার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে আরও একগুঁয়ে স্বভাবের হয়ে ওঠেন তিনি। বাবার কাছ থেকে পাওয়া জমিতে বাড়ি তৈরি করে একাই থাকেন। কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা নেন না। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে পত্রিকা বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন।

একই মহল্লার সত্তরোর্ধ্ব আবদুল কাদির বলেন, ‘আমার ছোট বোনের বান্ধবী খুকি। বিয়ের পর স্বামী মারা যাওয়ায় সে কিছুটা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তারপর থেকে তাকে পত্রিকা বিক্রি করতে দেখি। আমিও তার নিয়মিত গ্রাহক। প্রতিদিন সকালে আমাকে পত্রিকা দিয়ে যায়। ’

দিল আফরোজের বড় বোনের বাড়ি তার বাড়ির পাশেই। তার বড় বোনের ছেলে শামস-উর রহমান বলেন, ‘খালা বহু বছর ধরে পত্রিকা বিক্রির সঙ্গে জড়িত। তাকে নিষেধ করা হলেও শুনেন না। ’ খুকি তার শেষ সম্বলটুকু রেখে যেতে চান একটি স্কুলের জন্য। যে স্কুলের প্রথম ও দ্বিতীয় হওয়া শিক্ষার্থীরা তার টাকা থেকে বৃত্তি পাবে। মৃত্যুর শেষ শয্যা চান জন্ম শহর কুষ্টিয়ায়।


এই বিভাগের আরও খবর

জেনে নিন এক ক্লিকে বিভাগের সবখবর